সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম শুরু নিয়ে ধোয়াশা
আপলোড সময় :
৩০-০৯-২০২৪ ১০:০৭:৩৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৭-১০-২০২৪ ০৬:০৮:২৬ অপরাহ্ন
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। ফাইল ফটো
বাংলা স্কুপ, ৩০ সেপ্টেম্বর:
রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ৬টি কমিশন গঠন করেছে, ১ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে তাদের কাজ শুরুর কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এ কাজ শুরুর বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। ২০ দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশন প্রধানদের নাম ঘোষণা করেছেন। তবে কমিশনে অন্য কারা থাকছেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি এবং দপ্তরসহ কোনো কিছুই ঠিক হয়নি। এতে কমিশনের অন্য সদস্য, কমিশন প্রধান হিসাবে তাদের প্রস্তুতি, কাজের ব্যাপ্তি ও পরিধি এবং দপ্তরের বিষয়টি উঠে এসেছে। তাঁরা বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ চাওয়া হলে তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন। এর পরের বিষয় কিছু জানেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে কমিশনের কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ছয় সংস্কার কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। সরকারের চাওয়া হলো কাজ শেষে কমিশনগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, শিগগিরই সংস্কার কমিশনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি হতে পারে। পরিপত্র জারি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কমিশনকে সাচিবিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
ছয় সংস্কার কমিশন পুরোদমে কাজ শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। দ্রুতই এই আলোচনা হবে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। কমিশনের কাজের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, কমিশনের কাজ ১ অক্টোবর থেকে শুরু করার কথা। কিন্তু একটি সিদ্ধান্ত এসেছে তার আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ আরেক দফা আলোচনা করতে চাচ্ছে। শফিকুল আলম বলেন, কমিটির প্রধানদের যখন নাম ঘোষণা হয়েছে, তখন কমিশনের কাজ কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে। যেহেতু এখানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অংশীজন। তাই তাদের সঙ্গে আলাপ করে মতামত চাওয়া হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এটুকু বলতে পারি, এই আলোচনাটি খুব তাড়াতাড়ি হবে। আলোচনা হওয়ার পরই দেখবেন কমিশনের কাজগুলো শুরু হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই পরিপত্র জারি করা হবে। পরিপত্রেই জানিয়ে দেওয়া হবে কারা সংস্কার কমিশনগুলোর সদস্য হবেন।
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংস্কার কমিশনে আর কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা আমি এখনো জানি না। আমার জানার কথাও না। আমি অপেক্ষা করছি। আশা করছি যত শিগগির সম্ভব কাজ শুরু করতে পারব। ১ অক্টোবর থেকে যদি কাজ শুরু করতে হয় তাহলে তার আগেই জানতে পারতাম। সময় তো বেশি নেই। আবার ১ অক্টোবর শুরু না হয়ে কিছুটা দেরি হলেও অসুবিধা নেই। যাঁদের কমিশনে নেওয়া হবে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার সময় তো লাগবে। প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করব বলে আশা করছি।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক সচিব সফর রাজ হোসেন বলেন, কমিশনের সদস্য কতজন হবে, কারা হবেন, এসব বিষয়ে এখনো বলার মতো অবস্থা হয়নি। পরে সব কিছুই জানানো হবে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান বলেন, পত্রিকায় এসেছে ১ অক্টোবর কাজ শুরুর কথা। দেখি কী হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, আশা করছি, দু’য়েক দিনের মধ্যেই কমিশনের কাজ শুরু হবে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন আইনসচিব মো. গোলাম রব্বানী। রোববার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার এমপি হোস্টেলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের জন্য অফিস পরিদর্শন শেষে তিনি এই কথা জানান। আইনসচিব বলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। ওনারা যেখানে বসবেন, সেটা ঠিক আছে কি না তা দেখতে এসেছি। এই সংস্কার কমিশনের জন্য জাতীয় সংসদের এমপি হোস্টেলের ১ নম্বর ব্লকের চারটি রুম ঠিক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, রুমগুলো এখনো প্রস্তুত হয়নি। তাই সংসদের সচিব ও পিডব্লিউডির ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা রুমগুলো প্রস্তুত করে দেন। বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই পাঁচটি সংস্কার কমিশনের বিষয়ে গণপূর্ত থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে অ্যারেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সাচিবিক দায়িত্ব কে পালন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের যিনি সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন, তিনি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা হবেন। এটা আইন মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, জুলাই গণ-অভ্যত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করতে সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজনে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনে সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারে ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কারে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কারে ড. শাহদীন মালিককে সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা ওই দিন বলেন, এসব কমিশন পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এবং তিন মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিকসমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে বলেও ভাষণে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সংস্কার কমিশন ঘোষণার এক সপ্তাহ পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিকের পরিবর্তে অধ্যাপক আলী রিয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানায়। সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন।
ছয়টি কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রথম বারের মতো বৈঠক করেন গত ১৯ সেপ্টেম্বর। ঐ বৈঠকে অংশ নেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। বিদেশে থাকায় ঐ বৈঠকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম কয়েক দিন আগে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, গণমাধ্যমের জন্যও সরকার একটি কমিশন গঠন করছে। মতিবিনিময়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের অনেকেও গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশন গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এএইচ/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স